ডেস্ক রিপোর্ট : বিতরণের তুলনায় সংগ্রহ কম হওয়ায় দেশে কমেছে খাদ্যের মজুত। বর্তমানে দেশে খাদ্যের মজুত আপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছেছে। ১৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যকে আপৎকালীন মজুত হিসেবে নিরাপদ বিবেচনা করা হয়। তার নিচে চলে গেলে তা খাদ্যনিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বর্তমানে যে মজুত পরিস্থিতি তা আপৎকালীন মজুতসীমার কাছাকাছি। এমন পরিস্থিতিতে কাঙ্ক্ষিত মজুত বাড়াতে ব্যর্থ হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে খাদ্যবান্ধবসহ অন্যান্য কর্মসূচি। গত আগস্টে ২২ লাখ মেট্রিক টন মজুতের ইতিহাস গড়ার পর দুই মাসের ব্যবধানে তা ১৪ লাখ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ২৩ অক্টোবরের তথ্যানুযায়ী, ওই দিন পর্যন্ত মজুতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ১ হাজার মেট্রিক টন। তার মধ্যে চাল ১৩ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন, গম ৫৩ হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন। মূলত  বিতরণের তুলনায় সংগ্রহ কম হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য গত আগস্টের মাঝামাঝি থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এবার সুবিধাভোগী পরিবার সংখ্যা ৫ লাখ বাড়িয়ে ৫৫ লাখ করা হয়েছে। তাছাড়া ওএমএস-সহ অন্যান্য কর্মসূচিতেও খাদ্য বিতরণ বাড়ানো হয়েছে। ফলে দ্রুত মজুত কমছে। প্রতি মাসে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ৩ লাখ টনের কাছাকাছি খাদ্য যাচ্ছে। নভেম্বরে আরো ৩ লাখ মেট্রিক টন যাবে। তবে ডিসেম্বর থেকে আমন মৌসুমের সংগ্রহ শুরু হতে পারে। যদিও আমন মৌসুমে সংগ্রহ খুব বেশি হয় না। কৃষক ওই ধান মজুত করে। এমন অবস্থায় বিকল্প উপায়ে সংগ্রহ বাড়াতে না পারলে খাদ্যের মজুত আপৎসীমার নিচে চলে আসবে। তখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে পরিস্থিতি।
সূত্র জানায়, সরকারের খাদ্য আমদানি চলতি অর্থবছরে সন্তোষজনক নয়। বিগত ১ জুলাই থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে ১৪ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য আমদানি হয়েছে। সরকারি খাতের আমদানির পরিমাণ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন (৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৪৩ হাজার মেট্রিক টন গম)। আর আমদানির বেশির ভাগ প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন বেসরকারি খাতের মাধ্যমে এসেছে। ফলে আমদানি সরকারি মজুতে ভূমিকা রাখছে না। গত অর্থবছরে সরকার ১৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমদানি করেছিল। যার মধ্যে ছিলো ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ মেট্রিক টন গম। আর গত অর্থবছরের সমান আমদানি করতে চাইলেও সরকারকে বাকি আট মাসে আরো ১২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমদানি করতে হবে। সরকার বোরো মৌসুম থেকে যে পরিমাণ সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছিল তা পূরণ হয়নি। গত বোরো মৌসুমে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ধান ও চাল মিলিয়ে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু ১৭ লাখ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়। আগামী আমন মৌসুমেও খুব বেশি সংগ্রহ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থায় আমদানির মাধ্যমে মজুত বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে দ্রুত খাদ্য মজুত না বাড়ালে খাদ্য-নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ চালের দাম বেড়ে গেলে ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হতে পারে। তাছাড়া অন্যান্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিও সচল রাখতে হবে। সেজন্যই জরুরি ভিত্তিতে চাল ও গমের মজুত বাড়ানো প্রয়োজন। যাতে দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তা ব্যবহার করা যায়। এদিকে খাদ্য মজুত নিয়ে আশঙ্কার কারণ নেই জানিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার জানান, খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচিতে চাল যাচ্ছে। রেশনিংয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্য যাচ্ছে। যে কারণে মজুত কমছে। জরুরি ভিত্তিতে ৪ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানি হয়েছে। আরো তিনটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমন মৌসুম সামনে রেখে ১৫ নভেম্বর থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ শুরু হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।