বাংলাদেশের মিসড ডোজ বৃদ্ধি সন্ধ্যাকালীন ও অবকাশে টিকাদান চালুর দাবি – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, দুপুর ১২:৩৭, ১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

বাংলাদেশের মিসড ডোজ বৃদ্ধি সন্ধ্যাকালীন ও অবকাশে টিকাদান চালুর দাবি

newsup
প্রকাশিত এপ্রিল ২১, ২০২৫
বাংলাদেশের মিসড ডোজ বৃদ্ধি সন্ধ্যাকালীন ও অবকাশে টিকাদান চালুর দাবি

Manual7 Ad Code

ডেস্ক রিপোর্ট

২১ এপ্রিল, সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ‘বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, উদ্ভাবন, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।

Manual7 Ad Code

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) বাংলাদেশ সরকারের সফল উদ্যোগগুলির মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে বাংলাদেশে ইপিআই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে ইপিআই কার্যক্রম সারা দেশে সম্প্রসারণের উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়। ঢাকা শহরে ইপিআই কার্যক্রম ১৯৮৯ সালে প্রাথমিকভাবে যাত্রা করে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগীয় শহরে বিস্তৃত কর হয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশ টিকাদান কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে এবং ভ্যাকসিন-প্রতিরোধযোগ্য রোগ (ভিপিডি) নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণেও যথেষ্ঠ অগ্রগতি অর্জন করতে সামর্থ্য হয়। ইপিআই একটি মূল্যবান বিনিয়োগ, যেখানে প্রতি ১ মার্কিন ডলার বিনিয়োগের জন্য ২৫.৪ মার্কিন ডলার লাভ হয়।

ইপিআই এবং এমআইএস ইউনিসেফের কারিগরি সহায়তায় টিকাদান কার্যক্রমে বৈপ্লবিক উদ্ভাবন নিয়ে এসেছে (যেমন ভ্যাক্সইপিআই, ই-ট্রাকার, জিআইএসভিত্তিক অনলাইন মাইক্রোপ্ল্যান, এবং ই-ভিএলএমআইএস)। ইপিআই কাভারেজ ইভালুয়েশন সার্ভে ২০১৯ এর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর কভারেজ ছিল ২ শতাংশের নিচে যা বর্তমানে ৮৩.৯ শতাংশে উন্নিত হয়েছে। তবে গ্রাম শহর নির্বিশেষে কাভারেজের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়( ইপিআই, ডিজিএইচএস, কাভারেজ ইভালুয়েশন সার্ভে ২০১৯, রিপোর্ট ডিসেম্বর ২০২০)। উল্লেখ্য যে গত ১২ বছরে ইপিআই কভারেজ ৮৪% এর ওপরে উঠেনি এবং ১৬% শিশু টিকা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

Manual6 Ad Code

সম্প্রতি ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের যৌথ গবেষণায় (২০২৪) সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) এর অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে টিকা কার্যক্রমে জনবলের ঘাটতি,( ইতিমধ্যে বর্তমান সরকার ২০টি জেলায় অনেকগুলো নিয়োগ সম্পন্ন করেছে) অঞ্চলভিত্তিতে টিকাকেন্দ্রের অসম বণ্টন, অপর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, টিকার অপর্যাপ্ততা, টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব, দুর্গম এবং, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহনজনিত সমস্যা, টিকাদান সম্পর্কিত প্রচারণার অভাব ইত্যাদি।

Manual8 Ad Code

উক্ত যৌথ গবেষণা (২০২৪) প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পদ এবং ইপিআই সদর দপ্তর এ ৪৩ শতাংশ পদ এখনও শূন্য রয়েছে। আরবান ইমিউনাইজেশন স্ট্র্যাটেজি-২০১৯ এবং ইপিআই মাইক্রোপ্ল্যান-২০২৪ অনুসারে প্রতি পঞ্চাশ হাজার জনসংখ্যার জন্য ৬ জন টিকাদানকর্মী প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। টিকাদান কর্মসূচী সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বাজেট বরাদ্দে দেরি হচ্ছে, Health Sector Plan আগামী ২ বছরের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এর ফলে টিকা ক্রয়, টিকা পরিবহণ এবং বণ্টনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

আগামী ২০২৯ সালের পর গ্যাভি (GAVI) টিকাদান প্রকল্পে সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে সরকারকে নিজস্ব অর্থায়নে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। তাছাড়া সারাদেশে শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে টিকাদানকেন্দ্র পরিদর্শন, টিকাদান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অভাব পরিলক্ষিত হয়। বস্তিবাসী, ভাসমান জনগোষ্ঠী, পাহাড়ি, হাওর এবং নদীতীরবর্তী এলাকায় টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অজানা থাকায় জিরো ডোজ এবং মিসড ডোজ শিশুদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন পরিচালিত উক্ত যৌথ গবেষণা (২০২৪) প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই)এর উচ্চ কভারেজ নিশ্চিত করা এবং ইপিআই প্রোগ্রামকে আরও বেগবান করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ সুপারিশ বা পরামর্শ তুলে ধরে। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে যে শূন্যপদ আছে সেখানে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া, জনসংখ্যা ভিত্তিক জনবলনীতি অভিযোজন করা, জনসংখ্যার ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে টিকা কেন্দ্রের সুষম বন্টন, প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা, তাছাড়া অদুর ভবিষ্যতে ভ্যাকসিনের যে সংকট দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে যথাযত বাবস্থা গ্রহন করতে হবে। এছাড়া ইপিআই প্রোগ্রাম মনিটরিং এবং মূল্যায়নের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের অনুপ্রাণিত করে মানসম্পন্ন তত্ত্বাবধান এবং পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকার মানুষের মধ্যে টিকাদান নিশ্চিত করার জন্য নির্দিষ্ট কৌশলের পরিকল্পনা (ম্যাপিং, মোবাইল ক্লিনিক, ডোর-টু-ডোর টিকাদান) বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহন নিশ্চিত করার লক্ষে পরিবহন ব্যবস্থা জোরদার করা, পোর্টারদের জন্য পরিবহন বাজেট সংশোধন, কোল্ড-চেইন মেইনটেইন ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করতে হবে। এছাড়া টিকাদানে সন্ধ্যাকালীন সেশানের বাবস্থা করা, সাপ্তাহিক অবকাশে টিকাদান সেশানের পরিকল্পনা করা জরুরি।

Manual2 Ad Code

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা সমূহের পরিচালক এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য, বর্তমান প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায়সমূহ নিয়ে উক্ত আলোচনা করেন। প্রেস কনফারেন্সে আরও উপস্থিত ছিলেন, ডাঃ আবুল ফজল মোঃ সাহাবুদ্দিন খান, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ইপিআই, স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর, ঢাকা, বাংলাদেশ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন পরিচালিত উক্ত গবেষণা প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম। ডেস্ক জেবি

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code