শ্রীমঙ্গল চা শিল্পাঞ্চলে চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণের দাবী

Daily Ajker Sylhet

newsup

০৪ মে ২০২৫, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ


শ্রীমঙ্গল চা শিল্পাঞ্চলে চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণের দাবী

সংগ্রাম দত্ত

আধুনিক চিকিৎসা সুবিধার স্বার্থে দেশে-বিদেশে চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত ও পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হসপিটাল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন চা শিল্পাঞ্চলে কর্মরত লক্ষাধিক চা শ্রমিক ও মৌলভীবাজার জেলার কয়েক লক্ষাধিক দরিদ্র জনগোষ্ঠী ।

বাংলাদেশে চীনের সহায়তায় তিনটি আধুনিক বড় হাসপাতাল তৈরির প্রস্তুতি চলছে। এরমধ্যে একটি হাসপাতাল মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় স্থাপনের দাবি করেছেন শ্রীমঙ্গলের চা শিল্পাঞ্চল এলাকার বসবাসরত লক্ষ লক্ষ চা শ্রমিক
ও এলাকার জনসাধারণ। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা পোস্ট করে শ্রীমঙ্গলে চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল নির্মাণের দাবি করে পোস্ট করেছেন।

বর্তমানে সিলেট বিভাগীয় শহরে একটিমাত্র উন্নত হসপিটাল রয়েছে । যার নাম সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ হসপিটাল। সিলেট বিভাগের দূরদূরান্ত জেলা হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে উপজেলা মাধবপুর, চুনারুঘাট, লাখাই, বানিয়াচং, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, বড়লেখা উপজেলার মুমূর্ষ রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হসপিটালে প্রায়ই রেফার করা হয়।

চীনের প্রস্তাবিত তিনটি হাসপাতালের মধ্যে একটি শ্রীমঙ্গল উপজেলায় হওয়ার প্রযোজন। পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা চা-বাগান, রাবার বাগান, হাওর, পাহাড় বেস্টিত একটি জেলা। এই জেলায় চা, রাবার শ্রমিক, আদিবাসি সহ লক্ষাধিক অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বসবাস। বিগত সরকারগুলোর আমলে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ উপজেলা নূন্যতম উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ঊপজেলা। হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা পর্যটন জেলা হিসেবে দেশে-বিদেশে সর্বত্রই পরিচিত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাইফুর রহমান তিনবার অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হওয়ার কারণে বৃহত্তর সিলেটের প্রায় জায়গাতেই অনেক উন্নয়ন হয়েছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর বিগত দেড় দশকের উপর মৌলভীবাজার জেলা বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে তেমন কোন অবকাঠামগত উন্নয়ন হয়নি।
চা শ্রমিক ও দরিদ্র পীড়িত অধিবাসী চীন প্রদত্ত ১টি অত্যাধুনিক হাসপাতাল দেশ-বিদেশে চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত ও পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে স্হাপন করার জন্য দাবি জানান।

মৌলভীবাজার জেলায় ৯২ টি ও হবিগঞ্জ জেলায় ২৪টি চা বাগান রয়েছে। এই চা শিল্পাঞ্চল এলাকা গুলোতে রয়েছেন বেশ কয়েক লক্ষাধিক কর্মরত ও বসবাসরত চা শ্রমিক। চা বাগান গুলোর মধ্যে অধিকাংশের উপরে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত। দরিদ্রপীড়িত চা শ্রমিক ও পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলা কাছাকাছি হওয়ায় শ্রীমঙ্গল এলাকায় একটি হাসপাতাল স্থাপন করা হলে আশপাশের জেলাসহ চা শিল্পাঞ্চল ও মৌলভীবাজার জেলার অন্যান্য উপজেলার অধিবাসীদের খুব সহজেই শ্রীমঙ্গলের এই উন্নত হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হবে।

শ্রীমঙ্গলে চায়না বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল স্থাপিত হলে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার অধিবাসীদের সিলেট এমএ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া থেকে অনেক ব্যয় ও সময় সাশ্রয় হবে। কাছাকাছি হসপিটাল করা হলে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ বাসী খুব সহজেই উন্নত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হবে। তাছাড়া সারা দেশের সাথে শ্রীমঙ্গলের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত হওয়ায় খুব সহজেই এখানে আসা যাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে এই অঞ্চলের বিত্তশালী লোকজন সিলেটের কাছাকাছি ভারতের শিলচর, শিলং ও আগরতলাসহ কলকাতা, চেন্নাই, ও বাঙ্গালোরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়।

এ প্রসঙ্গে এলাকার শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সাংবাদিক ও ৮৬ বছর বয়সী রাজনীতিবিদ রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এলাকায় একটি উন্নত হাসপাতাল স্থাপনের। শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ইছবপুর এলাকায় একটি উন্নত হসপিটাল চালু করা হয়। বসানো হয় উন্নত যন্ত্রপাতি। কিন্তু উপজেলা লেভেলে হাসপাতাল স্থাপিত হওয়ায় ডাক্তাররা এখানে আসতে চান না। আসলেও থাকতে চান না । বেশির ভাগই জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে তাদের পছন্দ হওয়ায় সেখানে পোস্টিং নিয়ে চলে যান। অন্যদিকে হাসপাতালটিতে মানুষের সেবা কার্যক্রম পর্যাপ্ত না থাকায় লোকজন এখানে না গিয়ে জেলা সদর ও সিলেট বিভাগীয় সদরে গিয়ে চিকিৎসা করাতেন। ফলে হাসপাতালটি বন্ধ করে এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বানানো হয়। লক্ষ লক্ষ চা শ্রমিক মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার গ্রামাঞ্চলের দরিদ্রপীড়িত মানুষের স্বার্থে চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল চালুর দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্তর সভাপতি আ ফ ম আব্দুল হাই ডন বলেন, সিলেট বিভাগের মধ্যে শ্রীমঙ্গল একটি কসমোপলিটান টাউন। একটি উপজেলা শহর হলেও অনেক জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে এর গুরুত্ব অনেক বেশি।
মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে প্রায় ১২০ টির কাছাকাছি চা বাগান রয়েছে। এই চা শিল্পাঞ্চলে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ও দুটি জেলার অধিবাসীদের সাথে শ্রীমঙ্গলে একটি উন্নত মানের হাসপাতাল চালু করা হলে খুব সহজে এসব এলাকার মানুষজন চিকিৎসা সেবা পাবে। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহর, কমলপুর, ধলাই , আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলা গুলো থেকে লোকজন কলকাতা, চেন্নাই ও ব্যাঙ্গালোরের পরিবর্তে অল্প সময় ও কম খরচে এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে। তাছাড়া এলাকাও অনেক উন্নত হবে।

শ্রীমঙ্গলের সন্তান ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক প্রীতম দাস বলেন, চা বাগান ও হাওর অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে শ্রমজীবী মানুষের সুবিধার্থে শ্রীমঙ্গলে হাসপাতাল টি স্থাপনের জন্য আমরা জোড়ালো দাবী জানাব।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।