নীলকরদের অত্যাচার-নির্যাতনের কালের সাক্ষী – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, বিকাল ৩:৩৮, ১লা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

নীলকরদের অত্যাচার-নির্যাতনের কালের সাক্ষী

প্রকাশিত নভেম্বর ২৩, ২০২০
নীলকরদের অত্যাচার-নির্যাতনের কালের সাক্ষী

Manual5 Ad Code

আমিরুল ইসলাম অল্ডাম, গাংনী,মেহেরপুর :
নীলকররা দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে বহু বছর আগে। এলাকার কৃষক ও মজুরের ওপর তাদের নিদারুণ অত্যাচার আর দুঃশাসন এখন কেবলই ইতিহাস। তাদের সীমাহীন অত্যাচার আর ত্রাসের গল্পগাঁথা লিপিবদ্ধ আছে বইয়ের পাতায় পাতায়। কালের সাক্ষী হয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে দাঁড়িয়ে আছে নীলকরদের শাসন ও শোষণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত কিছু নীলকুঠি। মেহেরপুর জেলায় নীলকরদের রকম দুইটি স্থাপনা রয়েছে। একটি মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি নীলকুঠি। অপরটি গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া নীলকুঠি। আমঝুপি নীলকুঠি ইতোমধ্যে প্রতœতত্ব বিভাগের অধীনে সংস্কার শেষে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। অযতœ, অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলুপ্তির পথে থাকা ভাটপাড়া স্থাপনাটি অবশেষে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
গাংনী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ভগ্নপ্রায় ঐতিহাসিক কুঠিবাড়িকে ঘিরে ডিসি ইকোপার্ক হিসেবে এলাকাটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। নীলকুঠি ভবনটি সংস্কারের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড থেকে ২০১৮ সালের জুন মাসে ত্রিশ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। কিন্তু প্রশাসনিক কিছু জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এরপরে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের কারিগরি নির্দেশনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কাজটি শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গিয়ে দেখা যায়, ভগ্নপ্রায় নীলকুঠির দ্বিতল ভবনটির বেশির ভাগ দেয়াল সংস্কার করা হয়েছে। প্রথম তলার বিলুপ্ত ছাদ টালি ও চুন-সুড়কি দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভবনের দ্বিতীয় তলার ক্ষতিগ্রস্ত ছাদ মেরামতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভবনে নতুন করে দরজা-জানালা সংযোজনের প্রস্তুতিও দৃশ্যমান রয়েছে। সংস্কারের কাজটি বাস্তবায়ন করছেন মেহেরপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বারী এন্টারপ্রাইজ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা হলে তারা আনন্দের সাথে জানান- কুঠিবাড়ির এ সংস্কার কাজটা আমাদের এলাকার উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে। ভবনটি সংস্কার সম্পন্ন হলে এখানে দর্শনাথীদের পদচারণায় এলাকা মুখতির হবে। ভাটপাড়া নীলকুঠিতে জেলার বাহিরের জেলা থেকেও অনেক দর্শনার্থী ঘুরতে আসবে। এতে এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
দৌলতপুর থেকে আগত দর্শনার্থী আব্দুল জলিল বলেন, নীলকরদের শাসনের গল্প বইয়ে পড়েছিলাম। দু’বছর আগে একবার এই ডিসি ইকোপার্কে এসেছিলাম তখন ভবনটি একবারেই ভাঙ্গাছিলো। এবার এসে দেখছি ভবনটি সংস্কার চলছে। ভবনটির সংস্কার কাজ শেষ হলে নীলকুঠি তার পুরানো রুপ ফিরে পাবে। তখন এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
গাংনীর সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বলেন, ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী নীলকুঠিগুলো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের এগিয়ে আসা উচিত। নইলে অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা। ভাটপাড়া নীলকুঠি একটি ঐতিহাসিক নির্দশন। এই ভগ্নপ্রায় ভবনটি সংস্কার এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছিল। নীলকুঠি ভবন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ায় এলাকার মানুষ ও দর্শনার্থীরা বেশ উচ্ছ্বসিত। ইতিহাসের স্মারক নিজ চোখে দেখার অনুভূতি আসলে অবর্ণনীয়।
নীলকুঠি সংস্কার কার্যক্রমের তত্ত্বাবধায়ক গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, কাজটির জন্য সাড়ে আটাশ লাখ টাকায় টেন্ডার করা হয়েছে। কঙ্কালে পরিণত হওয়া ভবনটির দরজা-জানালা, কড়িকাঠ, বর্গা কিছুই ছিল না। আমরা কোনো কিছু সংযোজন বা বিয়োজন না করে পুরাতন আদল অক্ষত রেখে যতদূর সম্ভব কাজ করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগের মতোই চুন, সুড়কি ও টালি ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত কাজ করা হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর.এম সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে কাজ করা হচ্ছে। ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। পরবর্তীতে আবারো কোন বরাদ্দ পাওয়া গেলে নীলকুঠি ভবনের অধিকতর সংস্কার ও নীলকুঠি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ভবনের পুরানো অবয়ব ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করব।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code