সংগ্রাম দত্ত
গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে লিখেছে যে, “ইউরোপ কি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াচ্ছে?
ইউরোপজুড়ে উত্তেজনা তীব্র। ডেনমার্ক, নরওয়ে, এস্তোনিয়া, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ার মতো দেশগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ড্রোন হামলা, সাইবার আক্রমণ, সীমান্ত লঙ্ঘন ও অবকাঠামোগত হুমকির শিকার হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের কার্যকলাপ রাশিয়ার সুপরিচিত হাইব্রিড যুদ্ধ কৌশল—যেখানে সরাসরি যুদ্ধ না করে নানা অপ্রচলিত পদ্ধতিতে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়।
হাইব্রিড যুদ্ধের রূপ-
ডেনমার্কে এক সপ্তাহের মধ্যে সামরিক ঘাঁটি, বিমানবন্দর এবং তেল-গ্যাস প্ল্যাটফর্মের ওপর ড্রোন অনুপ্রবেশ ঘটে। পোল্যান্ডের আকাশে ঢুকে পড়া ২০টি রাশিয়ান ড্রোন ভূপাতিত করে দেশটির সেনারা। এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে রুশ যুদ্ধবিমান, যাদের ন্যাটোর উন্নত ফাইটার জেট তাড়া করেছে।
অন্যদিকে লন্ডন, বার্লিন ও ব্রাসেলসের বিমানবন্দরে সাইবার হামলার ফলে চেক-ইন সিস্টেম ভেঙে পড়ে। জার্মানি অভিযোগ করেছে, রুশ উপগ্রহ তাদের সামরিক স্যাটেলাইটকে ছায়া দিচ্ছে, যা গোয়েন্দাগিরির ইঙ্গিত বহন করে। মোল্দোভার সরকার বলছে, তাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে রাশিয়া কোটি কোটি ডলার ঢালছে দুষ্প্রচার প্রচারণায়।
ন্যাটোর সামনে দোটানা-
ন্যাটোর মূল ভিত্তি আর্টিকেল ৫—যেখানে বলা হয়েছে, এক সদস্যের ওপর আক্রমণ মানেই সবার ওপর আক্রমণ। কিন্তু সমস্যাটা হলো: ড্রোন অনুপ্রবেশ, সাইবার হামলা বা তথ্যযুদ্ধকে কি সরাসরি আক্রমণ ধরা যাবে?
চ্যাথাম হাউসের গবেষক জারোস্লাভা বার্বিয়েরি বলেন, “রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ ও শান্তির মাঝামাঝি ধূসর অঞ্চলে কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এতে ন্যাটোকে জোর করে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।”
একদিকে শক্ত জবাব দিলে বড় আকারের যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঝুঁকি, অন্যদিকে নীরব থাকলে রাশিয়া আরও সাহসী হবে।
মার্কিন ভূমিকা ও ট্রাম্পের অনিশ্চয়তা-
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র কী করবে? ন্যাটোর শুরুর পর থেকে আমেরিকাই ছিল মূল ভরসা। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার ন্যাটোর গুরুত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এতে ইউরোপে শঙ্কা আরও বেড়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াবে কি না।
যদিও সাম্প্রতিক মন্তব্যে ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর সুরে কথা বলেছেন এবং পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াশিংটনের অবস্থানই নির্ধারণ করবে ন্যাটোর ভবিষ্যৎ দৃঢ় থাকবে, নাকি ভেঙে পড়বে।
সামনে কী?
অবিলম্বে ন্যাটো সাইবার র্যাপিড রেসপন্স টিম, ড্রোন প্রতিরক্ষা ইউনিট, যৌথ মহড়া ও গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির মাধ্যমে প্রতিরোধ জোরদার করছে। কিন্তু মূল প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—কোন পর্যায়ের হাইব্রিড হামলা যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে?
যদি কোনো বড় সাইবার আক্রমণে বিদ্যুৎ গ্রিড ভেঙে পড়ে বা ড্রোন হামলায় বেসামরিক প্রাণহানি ঘটে, তবে ইউরোপ সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ন্যাটোর ঐক্য এবং বিশেষত আমেরিকার ভূমিকা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।