ডেস্ক রিপোর্ট : ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার আবাসন ও প্রতিবন্ধী ভাতা কাঠামো নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ভ্যাঙ্কুভারের এক দম্পতি, অ্যামেলিয়া কুপার এবং তার স্বামী অ্যারন বুশ, প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন তাদের ভাড়া হঠাৎ করেই ৯২০ ডলার বেড়ে গেছে। আগে মাসিক ভাড়া ছিল ১,৩৪৫ ডলার, যা নতুন নোটিশে দাঁড়িয়েছে ২,২৬৫ ডলার।এই ঘটনায় প্রতিবন্ধী পরিবারগুলো কীভাবে সরকারের নীতির ফাঁদে আটকা পড়ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অ্যামেলিয়া কুপার নিজেই একজন প্রতিবন্ধী। তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধী হিসেবে আমার জীবনে ব্যয় অনেক বেশি। চিকিৎসা, যাতায়াত, বিশেষ সরঞ্জাম এসবের খরচ আলাদা। অথচ সরকারের চোখে সামান্য আয় বাড়লেই ভর্তুকি কেটে নেওয়া হয়। ফলাফল দাঁড়ায়, সুবিধা নয় বরং ক্ষতি।”দম্পতির দাবি, তাদের বার্ষিক আয় ও সরকারের নির্ধারিত সীমা যোগ করলে তা ৮৪ হাজার ডলারের বেশি হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে তাদের বার্ষিক অতিরিক্ত ব্যয় সাধারণ পরিবারের তুলনায় ৩০–৪০ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ কাগজে-কলমে তারা “ধনী ভাড়াটে”, অথচ বাস্তবে খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার হাউজিং ক্রিটিক লিন্ডা হেপনার বলেন, “তারা একেবারেই সঠিক কথা বলেছেন। প্রতিবন্ধী পরিবারের ভর্তুকি নির্ধারণে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। অতিরিক্ত ব্যয়কে নীতিতে প্রতিফলিত না করলে এই কর্মসূচি কার্যকর হবে না।” নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু “আয়ের সীমা” ধরে ভর্তুকি কাঠামো সাজানো বাস্তবসম্মত নয়। প্রতিবন্ধী পরিবারগুলোর প্রকৃত ব্যয় বিবেচনায় না নিলে কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।আবাসন মন্ত্রণালয় সরাসরি কোনো জবাব দেয়নি। তবে গ্লোবাল নিউজকে পাঠানো এক ইমেইলে জানিয়েছে, তারা আরও সাশ্রয়ী আবাসন তৈরিতে কাজ করছে। অন্যদিকে, সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাস মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রতিবন্ধীদের বিশেষ চাহিদা যাতে নীতিতে প্রতিফলিত হয়, সে বিষয়ে তারা সচেষ্ট।
তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, কথায় নয়, বাস্তব পদক্ষেপই এখন জরুরি।কুপার-বুশ দম্পতির আরেক দুশ্চিন্তা হচ্ছে একসঙ্গে বসবাস করায় প্রতিবন্ধী ভাতা কেটে নেওয়া হতে পারে। বর্তমানে তারা বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস এই সুবিধা পান। নতুন ভাড়া বৃদ্ধি এবং সম্ভাব্য ভাতা হ্রাস মিলে তাদের আর্থিক সংকট আরও গভীর হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ আবাসন ভর্তুকির জন্য আবেদন করলেও আয় সীমা অতিক্রম করার কারণে বঞ্চিত হন।গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অতিরিক্ত ব্যয় বছরে গড়ে ৯,০০০–১২,০০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।ভ্যাঙ্কুভারে বর্তমানে এক বেডরুমের গড় ভাড়া প্রায় ২,৬০০ ডলার, যা পাঁচ বছরে ৩৫% বেড়েছে।কানাডিয়ান মর্টগেজ অ্যান্ড হাউজিং কর্পোরেশনের তথ্যে বলা হয়েছে, প্রদেশের ৪৫% ভাড়াটে পরিবার আয়ের ৩০%-এর বেশি ভাড়া দিচ্ছেন। প্রতিবন্ধী পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি গড়ে ৫৩%।
ফলস্বরূপ, প্রতিবন্ধী পরিবারের অর্ধেকেরও বেশি তাদের আয়ের বড় অংশ শুধু ভাড়া মেটাতেই খরচ করছে। এতে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পরিবহন ও মৌলিক চাহিদায় বড় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য ন্যায্য জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে ভর্তুকি ও ভাতা কাঠামোয় মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। শুধু সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, বাস্তব জীবনের ব্যয় বিবেচনা করে নীতি প্রণয়ন করতে হবে।কুপার দম্পতি ও তাদের মতো আরও অনেক পরিবার বলছেন, “আমরা প্রতিবন্ধী, আমাদের আয় সামান্য হলেও খরচ অনেক বেশি। অথচ সরকার আমাদের কাগজে-কলমে ধনী ভাড়াটে হিসেবে দেখছে।” ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বর্তমান আবাসন ও ভর্তুকি নীতি আসলে কার জন্য তৈরি? এই প্রশ্ন এখন জোরালোভাবে সামনে এসেছে। প্রতিবন্ধী পরিবারগুলোর বাস্তব ব্যয় ও চাহিদাকে উপেক্ষা করে আয় নির্ভর সীমা নির্ধারণ করলে তারা আরও প্রান্তিক হয়ে পড়বে।প্রদেশজুড়ে প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করতে নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন না এলে এই বিতর্ক দীর্ঘস্থায়ী সংকটে রূপ নিতে পারে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।