চিকিৎসক-রোগীর মানবিক সম্পর্ক চান প্রধানমন্ত্রী – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, দুপুর ১:৩৭, ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

চিকিৎসক-রোগীর মানবিক সম্পর্ক চান প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত মার্চ ১৮, ২০১৮
চিকিৎসক-রোগীর মানবিক সম্পর্ক চান প্রধানমন্ত্রী

Manual7 Ad Code

রোগীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সংবেদনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে জটিল রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রবণতাও তিনি মেনে নিতে রাজি নন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো চিকিৎসক রোগী মেরে ফেলতে চান না। কাজেই তাদের ওপর হামলার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিষয়ে স্বজনদেরকে আরও ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রবিবার রাজধানীতে ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্সিং এর যৌথ উদ্যোগে এই সম্মেলনে দেশি বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অংশ নেয়ার কথা আছে।

সম্মেলনে যোগ দিলে চিকিৎসকরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে নানা পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী সেসব পরামর্শ নোট করে নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে, চিকিৎসক সংকট মোকাবেলায় সরকারের নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রতি রোগীর স্বজনদের, রোগীর প্রতি চিকিৎসকদের আচরণ ও মনোভাব কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়েও কথা বলেন তিনি।

চিকিৎসকদের রোগীর প্রতি মানবিক আচরণের তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোগীকে তো কথা বলে… আসলে মুখের কথায় তো অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যেতে পারে। তাদের মধ্যে একটা কনফিডেন্স এনে দেয়া, সেটাও আমাদের ডাক্তারদের একটু… করা দরকার।’

‘চিকিৎসা পেশা মহান পেশা, এটা রোগীদের ভরসার স্থল, আশার স্থল, কাজেই এটা ধরে রেখে মানুষের চিকিৎসা করে যাবেন, এটা আমরা চাই।’

আবার চিকিৎসকের ওপর রোগীর স্বজনদের চড়াও হওয়াটাও মানতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘রোগী মরে গেলে ডাক্তারদের পেটাবে, এটা আমার কেমন ধরনের কথা? ডাক্তার তো আর রোগী মেরে ফেলতে চায় না কখনও, রোগী বাঁচাতেই চায়। এই ধৈর্যটা তো ধারণ করতে হবে।’

এই ধরনের হামলার কারণে রোগীরা ভুক্তভোগী হচ্ছে, সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘অনেক হাসপাতাল আছে, বিশেষ করে অনেক প্রাইভেট হাসপাতাল, তারা ক্রিটিক্যাল রোগী ভর্তি করতেই চায় না। কারণ, রোগী মরে গেলে তো আমাদের ভাঙচুর করবে।’

‘আমাদের যারা আত্মীয় স্বজন, তাদের এ ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া উচিত।’

জটিল রোগীদের চিকিৎসায় কাজ করা চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রোগীরা এখানে মরণাপন্ন, তাদের সেবা দেয়া। এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ওখানে যারা কাজ করে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হয়। যাতে ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়, তার জন্য কী কী করণীয়..।’

‘আমাদের যেটুকু অভিজ্ঞতা আছে, সেটুকু তো আছেই, কিন্তু অন্যান্য দেশে যেখানে সফলভাবে মেডিকেল ট্রিটম্যান্টটা দেয়া হয়, তারা কীভাবে নিজেদেরকে এই সমস্ত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে সেটাও যেমন দেখতে হবে আবার রোগীদের চিকিৎসা সেটাও দেখতে হবে।’

চিকিৎসকদের বই লেখার তাগাদাও দেন শেখ হাসিনা। বলেন, আমাদের ভালো ভালো ডাক্তাররা এত নামকরা হয়ে যান, কিন্তু বই লেখেন না। লেখাটেখা করেন, এটা আমি বলব।’

‘মেডিকেল সায়েন্স কিন্তু অনেক এগিয়ে যাচ্ছে, আর এই বই এত দামী অনেকের পক্ষেই কেনা সম্ভব নয়। কাজেই আমরা মনে হয় আপনাদের বিভিন্ন এসোশিয়েশন আছে, আমাদের মিনিস্ট্রি থেকেও মনে হয় একটা উদ্যোগ নেয়া উচিত যে, প্রত্যেকটা মেডিকেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লাইব্রেরিটা একান্তভাবে প্রয়োজন।’

ভিজিটর নিয়ন্ত্রণে তাগিদ

জটিল রোগীদেরকে যখন তখন দেখতে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করতে চিকিৎসকদের আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজনে তার নাম ভাঙাতে বলেন তিনি।

‘আমরা যারা রাজনীতি করি, রোগী হলে তাকে দেখতে যেতেই হবে। আর মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হলে তাকে তো দেখতে যেতেই হবে। না হলে প্রধানমন্ত্রীরও ইজ্জত থাকে না, রোগীরও ইজ্জত থাকে না, রোগীর আত্মীয় স্বজনেরও ইজ্জত থাকে না।’

‘এমন অবস্থা হয় অনেক সময় যে, অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে ক্যামেরা নিয়ে ঢুকে পড়ে। অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে ক্যামেরা নিয়ে ঢুকে পড়তে হবে কেন?’

এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ছাড় না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ারের ডাক্তারদের আরও সাহসী হতে হবে, শক্ত হতে হবে। বাধা দিতে হবে। আমি তো বলে গেলাম, দরকার পড়লে আমার নাম ভাঙিয়েন।’

‘আমার ভোট বাড়ল না কমল তা নিয়ে আমার চিন্তা নাই। রোগী বাঁচল কি না, আমার সেটা নিয়ে চিন্তা, রোগী সেবা পেল কি না, আমার সেটা নিয়ে চিন্তা।’

Manual2 Ad Code

রোগীর স্বজনদের জন্য ভিজিটর কর্নার করে দেয়া, মনিটরে রোগী দেখা বা কাঁচের বাইরে থেকে রোগী দেখার পদ্ধতি চালুরও পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি বার্ন ইউনিটে নানা সময় রোগী দেখতে গিয়ে দেখেছেন কাঁচের বাইরে থেকে। কিন্তু এতে বিশেষ করে পত্রিকা ও টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যানরা ‘নাখোশ’ হয়েছিলেন।

‘তারা ছবি নিতে পারছে না। কারণ, রোগীর কাছে যাব, রোগীর বেডে বসব, তারা একটা ছবি নেবে, ওই ছবির অনেক মূল্য। কিন্তু রোগীর যে ১২টা বাজে, ওটা আর দেখে না।’

প্রশিক্ষণে গুরুত্বারোপ

চিকিৎসক এবং নার্সদের দেশের বাইরের পাশাপাশি দেশের ভেতর উন্নত প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার তাগাদা দেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে নার্সিং পেশাটা যে মহৎ সে বিষয়ে জন মনোভাব পাল্টানোর কথা বলেন তিনি।

Manual7 Ad Code

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের ডাক্তারদের উচ্চশিক্ষার জন্য ট্রেইনিং এর জন্য বিদেশে পাঠাতে চাই। আমার এটাই প্রশ্ন, যদি অন্য দেশ পারে, আমি পারব না কেন? কেন পিছিয়ে থাকব অন্য দেশ থেকে? আমাদের কি মেধার অভাব আছে? না। আমাদের কি জ্ঞানের অভাব আছে? না। আমাদের সুযোগের অভাব ছিল।’

ঢাকার পর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেয়া এবং সব বিভাগীয় শহরে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

Manual5 Ad Code

‘এখন আধুনিক প্রযুক্তি এবং নতুন নতুন রোগ বের হচ্ছে। সেটাকে চিকিৎসা করার পদ্ধতিও। সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিলে পরে, আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারি।’

চিকিৎসক সংকট দূর করা হবে

এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬৯টি এবং ডেন্টাল কলেজ ২৮টি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষার মানের দিকে নজর রাখতে বলেছেন তিনি। বলেন, ‘সেখানে শিক্ষার মানটা ঠিক মত আছে কি না, কারিকুলাম ঠিক মত আছে কি না, এই বিষয়টায় বিশেষভাবে নজর দেয়া দরকার।’

Manual7 Ad Code

‘আমরা প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স নিয়োগ দিচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা অনেক আইন শিথিল করে দিয়ে হলেও আমরা ব্যাপকভাবে ডাক্তার নার্স দিয়ে যাচ্ছি।’

‘নয় বছরে আমরা ১২ হাজার ৯৭৮ জন সহকারী সার্জন, ১১৮ জন ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দিয়েছি। সাথে সাথে ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী, ১২ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ২৪টি সরকারি হাসপাতাল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে আট হাজার শয্যা আমরা বৃদ্ধি করেছি। তার পরেও আমাদের শয্যার অভাব আছে।’

আটটি হাসপাতালে আইসিইউসে ১৭৭টি শয্যা করা হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা। আর এসব শয্যা করা হবে বিভাগীয় শহরে। আর এতে করে জটিল রোগীদের ঢাকায় নিতে আসতে হবে না।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code