ভিডিও চ্যাটে প্রেম খুঁজছেন চীনের তরুণেরা, লাইভে দেখছেন হাজারো দর্শক – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, দুপুর ১২:৩২, ১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

ভিডিও চ্যাটে প্রেম খুঁজছেন চীনের তরুণেরা, লাইভে দেখছেন হাজারো দর্শক

editorbd
প্রকাশিত এপ্রিল ৩০, ২০২৫
ভিডিও চ্যাটে প্রেম খুঁজছেন চীনের তরুণেরা, লাইভে দেখছেন হাজারো দর্শক

Manual6 Ad Code

অনলাইন ডেস্ক:

আগে কখনো প্রেমে পড়েননি চীনের নাগরিক স্টিভ চেন (২৫)। তবে গত বসন্তে নিজের প্রথম প্রেম খুঁজে পান তিনি। তাও আবার লাইভ ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে। শুধু চ্যান নয়, ভিডিও চ্যাটরুমে বর্তমানে প্রেম খুঁজছেন চীনের বহু তরুণ। সেখানে ‘সাইবার ম্যাচমেকার’ পরিচালনা করেন ডেটিং সেশন আর হাজারো মানুষ তা সরাসরি দেখেন এবং মন্তব্য করেন।

Manual8 Ad Code

চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে অবিবাহিত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড ২৪ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। জন্মহার কমে যাওয়া এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠী বাড়তে থাকায় বিয়ে ও একাধিক সন্তান নেওয়ার প্রতি উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনকে তরুণদের ডেটিংয়ের জন্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২০২৩ সালে রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বলেন, আমাদের উচিত নতুন ধরনের বিয়ে ও সন্তান জন্মদানের সংস্কৃতি গড়ে তোলা।

চেন সব সময়ই ছিলেন লাজুক ও অন্তর্মুখী প্রকৃতির। ফলে তাঁর জন্য সঙ্গী খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন ছিল। তবে সেই দিন এখন অতীত। চ্যাটরুমের এক লাইভ স্ট্রিমে তিনি প্রেমে পড়েন।

এই চ্যাটরুমের হোস্ট ছিলেন তিয়ান শিন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চীনা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ‘শাওহংশু’ বা ‘রেডনোট’-এ ভার্চুয়াল গ্রুপ ডেট পরিচালনা করে আসছেন তিনি।

দিনের বেলায় তিয়ান কাজ করেন একটি প্রযুক্তি কোম্পানিতে, আর রাত হলেই তিনি হয়ে ওঠেন ম্যাচমেকার। অপরিচিত ব্যক্তিদের হালকা ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করাতে লাইভ ভিডিওতে তিনি কৌতুক বলতেন, কথোপকথন পরিচালনা করতেন আর সম্পর্কবিষয়ক পরামর্শ দিতেন। তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে।

তিয়ান বলেন, চ্যাটরুম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সহানুভূতিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ কী বলছে, সেটা বুঝতে হবে।

তাঁর ভিডিও চ্যাটরুমে আট শতাধিক দর্শক উপস্থিত থাকেন। লাইভ ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে চীনা প্রেমের গান। আটজন অংশগ্রহণকারীর মুখ স্ক্রিনে এক গ্রিডে সাজানো। আর বাকিরা অপেক্ষায় থাকেন।

তিয়ান অংশগ্রহণকারীদের সবাইকে নির্ধারিত কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। যেমন: বয়স, ওজন, উচ্চতা, পেশা, আয়, অবস্থান, রাশিচক্র, শখ ও পছন্দের সঙ্গীর শর্ত। একবার এক শরীরচর্চা শিক্ষকের কাছে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কোনো প্রতিভা আছে? আমাদের দেখাতে পারবেন?’

এর উত্তরে তিনি খুলে ফেললেন শার্ট, দেখালেন পেশিবহুল দেহ। দর্শকদের মুখ হাঁ হয়ে গেল, কেউ করতালিও দিলেন। চ্যাটবক্সে ভেসে উঠল এক মন্তব্য—‘এখনকার ডেটিং এত প্রতিযোগিতামূলক!’

প্রাথমিক প্রশ্নোত্তরের পর সবাই শুরু করলেন রাতের কাজকর্মের ফাঁকে আলাপচারিতা। কেউ দিন শেষে মেকআপ তুলে ফেলছেন, কেউ খাচ্ছেন ফ্রাইড চিকেন।

এই আলাপচারিতার মাঝেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কারও সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলার বা সম্পর্ক গড়ার জন্য সময়ের অভাবই অনেকের জীবনে সবচেয়ে বড় বাধা।

অনেকের মতো চেনেরও সময়ের বাধা ছিল। কারণ তিনি তখন ছিলেন মেডিকেল রেসিডেন্সিতে। চেন বললেন, ‘পড়াশোনা আর কাজের চাপ এত বেশি যে, মানুষের সঙ্গে মিশে সম্পর্ক গড়ার সময় পাই না।’

২০২৫ সালের আইমিডিয়া রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ শতাংশ অবিবাহিত তরুণ-তরুণী বলছেন, ব্যস্ত কাজের সূচিই তাদের প্রেমের মূল বাধা।

Manual5 Ad Code

চীনের অনেক কর্মস্থলে ১২ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করতে হয়। এর জবাবে চীনে ‘লেয়িং ফ্ল্যাট’ নামের একটি প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে তরুণেরা সমাজের চাপ এড়াতে ইচ্ছে করে কম কাজ করছেন এবং একা থাকাই বেছে নিচ্ছেন।

Manual3 Ad Code

তবে যাঁরা বিয়ে করতে চান, তাঁদের জন্য ভিডিও লাইভস্ট্রিম ডেটিং একটি বিকল্প হয়ে উঠেছে। আগের মতো বিয়ের বাজারে পরিবার থেকে জীবনবৃত্তান্ত দেওয়া বা ডেটিং অ্যাপের প্রতি অনীহার জায়গা থেকে উঠে এসেছে এই মাধ্যম।

এদিকে লাইভ স্ট্রিমে অংশ নেওয়া নারী ক্রিস্টিন ঝ্যাং বলেন, ‘লাইভস্ট্রিম অনেক বেশি মজার ও ইন্টারঅ্যাকটিভ। শুধু প্রোফাইলের ছবি না দেখে মানুষটি কীভাবে কথা বলেন, আচরণ করেন, তা দেখা যায়।’

তিয়ান শিনের লাইভ স্ট্রিমে ঝ্যাংয়ের নজর কাড়লেন চেন। চেন মাঝে মাঝে ক্যামেরার সামনে নাচতেন, গান গাইতেন।

Manual4 Ad Code

সবার সামনে সাহস করে ঝ্যাং বললেন, চেনকে তাঁর ভালো লাগে। অন্য অংশগ্রহণকারীরা ও শত শত দর্শক মুগ্ধ হলেন তাঁর সাহসে।

ম্যাচমেকার তিয়ান তাদের আলাদা কথা বলার সুযোগ করে দিলেন। তারা চ্যাট করতে শুরু করলেন, এরপর কয়েক মাসের মধ্যেই দেখা করলেন বাস্তবে।

প্রায় এক বছর পর তারা একটি গভীর সম্পর্কে জড়িত হয়।

ঝ্যাং বলেন, ‘ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমি ক্যামেরার সামনে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে সাহস করেছিলাম। আমি মনে করি, সাহসীদের পক্ষেই ভালোবাসা আসে।’

ডেস্ক: এন

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code