ডেস্ক রিপোর্ট
পাকিস্তানের নাগরিকদের সাথে একই ফ্লাইটে পাকিস্তান হয়ে ঢাকায় ফ্লাইট আসা ৩৯ বাংলাদেশিকে পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিরে আসাদের মধ্যে একজন নারী। এবং তাদের হাতকড়া ও পায়ে শেকল পরানো হয়েছিল। শনিবার তাদের বহনকারী ভাড়া করা বিমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি অনুযায়ী এর আগে বিভিন্ন সময় ১১৮ জনকে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের হাতকড়া ও শেকল পরানো হয়নি। শনিবার যারা এসেছেন তাদের অনেকের চোখে–মুখে ছিল প্রচন্ড ক্লান্তির ছাপ। অনেকেই ছিলেন বিমর্ষ, বাকরুদ্ধ।
ফেরত আসাদের মধ্যে আছেন ঢাকার জিনজিরার বাসিন্দা মো. ফাহিম ও তার বাবা জুলহাস উদ্দিন। আজ রাতে ফাহিম বলেন, ‘হাতকড়া ও শেকল পরিয়ে আমাদের আনা হয়েছে। সিটে খুব কষ্ট করে বসেছিলাম। পাউরুটি, পানি ছাড়া কোনো খাবার দেয়নি। পানি ও পাউরুটি চাইলে নিয়ে আসত। কষ্ট করে খেয়েছি। টয়লেটে যাওয়ার কথা বললে অফিসার নিয়ে যেতেন। এরপর আবার হাতকড়া ও শেকল পরানো হত। ফ্লাইটে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার প্রেসার বেড়ে যায়। কান্নাকাটি শুরু করে দেন। এরপর কিছু সময়ের জন্য হাতকড়া ও শেকল খুলে দেওয়া হয়েছিল। ফ্লাইটি ঢাকায় অবতরণের পর হাতকড়া ও শেকল খুলে যাত্রীদের নামানো হয়। প্রায় ৬০ ঘণ্টা ফ্লাইটে ছিলাম। পাকিস্তানিদের নামানোর পর ফ্লাইট কাতার যায়। সেখান থেকে ঢাকায় আসে।’
ফাহিম আরও বলেন, কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পর সেখানে তারা আটক হন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্রথমে তারা কানাডায় গিয়েছিলেন।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্লাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, ইমিগ্রেশন আইন লঙ্ঘন ও অবৈধভাবে বসবাস করলে তাদের যেকোনো দেশ ফেরত পাঠাতে পারে।
শরিফুল হাসান আরও বলেন, ‘আমরা যতোটা জেনেছি কেউ কেউ ঘরবাড়ি বিক্রি করেছেন, ধার-দেনা করেন। কেউ ৩০ লাখ, কেউ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে মেক্সিকো বা দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ হয়ে অনিয়মিত পন্থায় পাড়ি জমিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর আশ্রয় প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন প্রশাসন।’
ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করেছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। তাদের কাউকে হাতকড়া পরানো হয়নি। ফেরত পাঠানোর আগের বিভিন্ন স্তরের আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মানবিক আচরণের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়াও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ভারত, ব্রাজিলসহ অনেক দেশের নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেছে অনেক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।