মাদক নিরাময়ে মডেল ‘ওয়েসিসে’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ৮:৩৯, ১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

মাদক নিরাময়ে মডেল ‘ওয়েসিসে’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা

newsup
প্রকাশিত অক্টোবর ৮, ২০২১
মাদক নিরাময়ে মডেল ‘ওয়েসিসে’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা

Manual2 Ad Code

নিউজ ডেস্কঃ  দেশে মাদক উৎপাদন না হলেও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মাদকের স্রোত ক্রমেই বাড়ছে। যতই দিন যাচ্ছে যুক্ত হচ্ছে খাত, আইস, এলএসডির মতো নতুন নতুন মাদকের নাম। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। বর্তমানে সারাদেশে ৮০ লাখেরও বেশি মাদকসেবী আছে বলে ধারণা করা হয়। এই মাদকসেবীদের মাদকের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ৩৭৪টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার পরিবর্তে নির্যাতন করা, পরিবেশ ভালো না থাকা, চিকিৎসক না থাকা, অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার মতো নানা অভিযোগে আস্থার জায়গা হারাচ্ছে নিরাময় কেন্দ্রগুলো।

Manual3 Ad Code

এমন প্রেক্ষাপটে পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকার অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে চালু করা হলো ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র। পরিচ্ছন্ন ও মনোরম পরিবেশ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বিনোদন সুবিধা, খেলাধুলার ও জিমনেশিয়ামের ব্যবস্থা, প্লাটিনাম ক্যাটাগরির এসি রুম, আত্মহত্যা ঠেকাতে সেন্সর বিশিষ্ট ফ্যান স্থাপন, লিফট ও জেনারেটর ব্যবস্থা, সব ধর্মের জন্য প্রার্থনার ব্যবস্থা, নারীদের জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ নানা রকম অত্যাধুনিক বৈশিষ্টের কারণে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বমানের সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকায় সারাদেশের মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর মডেল হবে ওয়েসিস। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জনকল্যাণের কথা চিন্তা করে কম খরচে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতেই ৬০ শয্যাবিশিষ্ট নিরাময় কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ওয়েসিস মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম, মাদকবিরোধী সংগঠন মানসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী, ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান।

Manual5 Ad Code

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, সেটাতে জয়ী হতেই হবে। এজন্য ইতোমধ্যে যে বিশালসংখ্যক মানুষ বিশেষ করে তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে তাদের জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। তা না হলে, ২০৪১ সালে আমরা যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, সেখানে হোঁচট খাব। দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষ সমন্বিত চেষ্টায় যেভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করেছে, ঠিক সেইভাবে মাদক নির্মূল করতে হবে। এজন্য সবার আগে চাহিদা কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। কারণ চাহিদা না থাকলে মাদকের সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য দেশে ৮০ লাখের বেশি মাদকসেবী থাকলেও মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ৩৭৪টি। যেখানে মাত্র ৫ হাজার রোগী একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারে। এই নগণ্যসংখ্যক নিরাময় কেন্দ্রগুলোতেও সমস্যার শেষ নেই। সেই জায়গায় ওয়েসিস নিরাময় কেন্দ্র অন্য মাত্রা যোগ করবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা দেয়া হয়। পুলিশ এটি (ওয়েসিস) করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ওয়েসিস নিরাময় কেন্দ্রটি যাতে ভালোভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যত ধরনের সাপোর্ট দরকার করা হবে। অ্যাম্বুলেন্স লাগলে দেয়া হবে। একই সঙ্গে দেশের লাখ লাখ মাদকসেবীকে সঠিক পথে ফেরাতে অন্যরা যেন ওয়াসিসের মতো আরো নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়, সেই আহ্বান জানাচ্ছি।

স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদারতার কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার ভ্যাকসিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছেন এবং বলেছেন, প্রত্যেক নাগরিকের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে যত টাকা লাগে দেয়া হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগে বলেছিল, মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ টিকা ফ্রি দেয়া হবে। পরে ৪০ শতাংশ টিকা ফ্রি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে করোনার টিকা তৈরির সরঞ্জাম ও কাঁচামাল দেয়ার কথা জানিয়েছে। এতে বাংলাদেশ টিকা রপ্তানিও করতে পারবে।

Manual4 Ad Code

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, দেশে মাদক নিরাময়ের চিকিৎসায় যে ব্যবস্থা রয়েছে তাতে ৮০ লাখ মাদকসেবীকে চিকিৎসা দিতে কত বছর লাগবে সেটি বলা মুশকিল। সেই জায়গায় ওয়েসিস একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। তিনি বলেন, প্রতি বছর শুধু চিকিৎসায় ১৫ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যায়। এই জায়গাটিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজর দিতে হবে। কেউ চাইলে হয়তো অত্যাধুনিক হাসপাতাল এবং যন্ত্রপাতি কিনে আনতে পারবে। কিন্তু এক্সপার্ট পাবে না। প্রথম অবস্থায় এক্সপার্ট বিদেশ থেকে আনলে পরে বাংলাদেশেই এক্সপার্ট তৈরি হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নতুন দিগন্তের দাড় উন্মোচন হবে।

Manual6 Ad Code

আইজিপি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক বিষয়ে মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মাদক নিরাময়ের ক্ষেত্রেও অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা করে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মডেল হওয়ার সুযোগ রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে মানিকগঞ্জে আরো একটি অত্যাধুনিক নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলেও জানান পুলিশপ্রধান।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code