ডেস্ক রিপোর্ট : ওয়াশিংটন–অটোয়া সম্পর্ক নতুন এক সংকটের মুখে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া কানাডিয়ান পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর বিষয়টি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ঘোষণার পরপরই কানাডিয়ান জনমনে সরকারের অবস্থান নিয়ে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
সর্বশেষ অ্যাঙ্গাস রিড ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬৩ শতাংশ কানাডিয়ান সরকারকে কঠোর ও আপসহীন অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো এখন জাতীয় স্বার্থের বিষয়। যদিও শুল্কের কারণে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে, তবু “কানাডার মর্যাদা ও স্বার্থ রক্ষার জন্য আপোষ নয়, বরং শক্ত অবস্থান জরুরি” এই মনোভাবই বেশি প্রতিফলিত হয়েছে সমীক্ষায়।
অন্যদিকে, মাত্র ৩৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী নরম অবস্থানের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রই কানাডার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। তাই সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি না নিয়ে প্রয়োজনে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বজায় রাখা উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক নীতি কানাডার অর্থনীতির জন্য একটি বড় হুমকি। কৃষি, অটোমোবাইল এবং উৎপাদনশীল খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে কানাডার অটোমোবাইল শিল্পে রপ্তানির ওপর নির্ভরশীলতা বেশি হওয়ায় হাজার হাজার কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়তে পারে। কৃষিপণ্য রপ্তানিতেও তীব্র প্রভাব পড়বে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রায় অর্ধেক কানাডিয়ান সরকার কর্তৃক আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর ডিজিটাল সার্ভিসেস ট্যাক্স বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। তাদের মতে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষি চালিয়ে যাওয়ার কৌশলের অংশ এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখার একটি উপায়। তবে সমালোচকদের অভিযোগ, এ ধরনের ছাড় যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি চাপ প্রয়োগে উৎসাহিত করতে পারে।
জনমত জরিপে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির জনপ্রিয়তার চিত্রও স্পষ্ট হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের ৪৬ শতাংশ তার নেতৃত্বের ওপর আস্থা প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে ৪৫ শতাংশ অনাস্থা জানিয়েছেন। অর্থাৎ শুল্ক সংকটকে ঘিরে সরকারের পদক্ষেপ কার্নির রাজনৈতিক অবস্থান ও জনপ্রিয়তায় প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দর-কষাকষির ফলাফল কার্নির নেতৃত্বের ভবিষ্যতও অনেকটা নির্ধারণ করবে।
কানাডা–মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্ক উত্তর আমেরিকার বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। তাই এই অচলাবস্থা শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে কানাডার ভেতরে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় অবস্থানের দাবি বাড়ছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক বাস্তবতা সরকারকে কিছু ছাড় দেওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে।
আগামী কয়েক সপ্তাহে কানাডার বাণিজ্য কূটনীতির কৌশল এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার ফলাফলই নির্ধারণ করবে কানাডা কি দৃঢ় অবস্থানে টিকে থাকবে, নাকি অর্থনৈতিক বাস্তবতার চাপে নমনীয়তা দেখাতে বাধ্য হবে। যা-ই হোক, এই সংকট থেকে উত্তরণের পথই কানাডার অর্থনীতি ও রাজনীতির ভবিষ্যত দিক নির্ধারণ করবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।