পিনোন-হাদি বেচে চলে সংসার – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, দুপুর ২:৫৮, ১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

পিনোন-হাদি বেচে চলে সংসার

প্রকাশিত নভেম্বর ২০, ২০২০
পিনোন-হাদি বেচে চলে সংসার

Manual6 Ad Code

সুপ্রিয় চাকমা শুভ, রাঙ্গামাটি

Manual3 Ad Code

পিছিয়ে নেই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসী চাকমা সম্প্রদায়ের নারীরা। আদিকাল হতে মানব সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও জীবিকা নির্বাহের তাগিদে সংগ্রাম করে চলছে। প্রকৃতি ও সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের অবস্থান এখন পুরুষের মত। যা সমতলের নারীদের সঙ্গে পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি নারীদের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন দেখা যায়, চাকমা নারীরা চাকরি থেকে শুরু করে নিজ উদ্যোগে ব্যবসা বানিজ্য চালিয়ে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন সংসারিক কাজে । পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারীদের জীবন সংগ্রাম সম্পূর্ণ আলাদা ও ভিন্ন আঙ্গিকের। পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় নিজেদের সংসার সাজানোর জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে পাহাড়ি নারীরা। স্বামীর সঙ্গে দুর্গম পাহাড়ি জমিতে জুম চাষ,কৃষি জমিতে চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন করেই সংসার চলে । অনেকে এই কঠিন কাজ থেকে সরে এসে বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন পেশায়। পাহাড়িদের শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে পরিস্থিতি,বদলাচ্ছে দিন,বদলাচ্ছে মনমানসিকতা। দেখা গেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৮০ শতাংশের বেশি নারীরা বেশি পরিশ্রমী।

Manual6 Ad Code

রাঙ্গামাটির অন্যতম প্রধান বানিজ্যিক এলাকা হচ্ছে বনরূপা বাজার। প্রতি শনি,মঙ্গল ও বুধবারে বসে হাট বাজার। সকাল সকাল বনরূপা বাজারের জিরেনী কুলিং কর্ণার ও লবিয়দি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের পাশে বসে পিনোন-হাদি বিক্রির বাজার। হাট বাজারের দিনে সকাল সকাল দেখা মেলে পাহাড়ি নারীদের। হাতে চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক ‘পিনোন-হাদি’। যেন নারীদের মিলন মেলা ঘটেছে। প্রতি হাট বাজারের দিনে পিনোন-হাদি পোষাক বিক্রি করতে আসেন পাহাড়ি নারীরা।

Manual2 Ad Code

বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে প্রায় অর্ধশতাধিক পাহাড়ি নারী নিজেদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির পোষাক পিনোন-হাদি বিক্রির জন্য বাজারে এসেছেন। হাট বাজারের দিন। অনেকে এসেছেন বিয়ের জন্য নতুন পোষাক কিনতে। প্রতি হাটবাজারে এক ব্যবসায়ীর বিক্রি হয় ১০ থেকে ২০ সেট পিনোন হাদি। অনেকে মাত্র ৩ থেকে ৪ জোড়া পিনোন-হাদি বিক্রি করতে পেরেছেন। তবে যারা কম বিক্রি করতে পেরেছেন তারা নতুন ব্যবসায়ী। করোনা ভাইরাস তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্ষতি করেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। করোনার আগে প্রতি ব্যবসায়ীর বিক্রি হতো কমপক্ষে ৩০ সেটা পিনোন-হাদির সেট। কিন্তু করোনার কারণে এখন ৩ থেকে ৪ জোড়া বিক্রি হচ্ছে। করোনার কারণে এখন লাভ হয় কম। পূঁজি লাগে বেশি। এক সেট পিনোন-হাদি বিক্রি হয় ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে পিনোন-হাদির উপর নির্ভর করে পিনোন-হাদি সেটের দাম। একসেট পিনোন-হাদি সেট বিক্রি করে লাভ হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। তবুও পিনোন-হাদি ব্যবসাটাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পাহাড়ি নারীরা। পিনোন বিক্রি করে এখন তাদের সংসার চলে। অনেকে এই ব্যবসার সাথে জড়িত প্রায় ২৫ বছর ধরে। অনেকে নতুন নতুন এসেছেন এই ব্যবসায়। আগে এ ব্যবস্যায় লাভজনক হওয়াতেই এখন বেড়েছে ব্যবসায়ীর সংখ্যা।

কথা বলেছি জয়মালা চাকমার(৫২) সাথে। পেশায় একজন পিনোন-হাদি ব্যবসায়ী। তিনি এই ব্যবসায় নেমেছেন ২৫ বছর আগে থেকে। বাড়ি রাঙ্গামাটি শহরের রাঙ্গাপানি এলাকায়। ছেলে ও মেয়ে এবং তার স্বামী নিয়ে তার স্বপ্নের পৃথিবী। ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে সব জায়গায় তার ঘুরা হয়েছে পিনোন-হাদি বিক্রির তাগিদে। প্রতি হাট বাজারে তিনি বিক্রি করতেন ২০ সেট অধিক পিনোন-হাদি । করোনার কারণে এবারে বিক্রি হয়েছে ১২ সেট । যা প্রতি পিনোন সেট বিক্রি হয় ৫ থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে পিনোন-হাদির উপর নির্ভর করে দামে ও সস্তায় বিক্রি হয়।
জয়মালা চাকমা বলেন, দীর্ঘ ২৫বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েছি। পিনোন-হাদি ব্যবসা আমাদের সংসারে একমাত্র আয়ের উৎস। ছেলে-মেয়েদের পড়া-লেখার খরচ থেকে শুরু করে সংসারের সব খরচ এই পিনোন-হাদি ব্যবসাকে পূঁজি করে।
কথা বলেছি আরো একজন পিনোন-হাদি ব্যবসায়ী আলোরাণী চাকমার (৩০) সাথে। তার বাড়ি রাঙ্গামাটির কাটাছড়ি কলাবুনিয়া গ্রামে। পরিবারে আছে ৫জন সদস্য। তিনি এই ব্যবসাতে নতুন। সবেমাত্র একবছর হয়ছে। তিনি এবারে পিনোন-হাদি সেট বিক্রি করেছেন মোট ১২ সেট। যা প্রতি পিনোন-হাদি সেট থেকে লাভ হয় ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে করোনার কারণে ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে বলে জানান আলোরাণী চাকমা।

Manual7 Ad Code

সোনালী চাকমা(৩৫)।তিনিও একজন পিনোন-হাদি ব্যবসায়ী। পিনোন-হাদি ব্যবসা শুরু করেছেন ১৫ বছর আগে থেকে। বাড়িতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা মোট ৪জন। বাড়ি রাঙ্গামাটি সদরের মানিকছড়ি এলাকাতে। এবারে তিনি পিনোন হাদি সেট বিক্রি করেছেন মোট ৪ সেট। করোনার আগে বিক্রি হতো ১২ থেকে ২০ সেট পিনোন হাদি।
লবিয়দি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক নিপায়ন চাকমা বলেন, পাহাড়ি নারীরা আগের মত আর নেই। শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাওয়াতে নারীদের চিন্তা-চেতনা পরিবর্তন হয়েছে। এখন পাহাড়ি নারীরা নিজের আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছে। প্রতি হাট বাজারের দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী নিজেদের ভাগ্য রচনা করতে এখানে আসেন। পিনোন-হাদি বিক্রি করে এখন তারা তাদের সংসার চালাচ্ছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code