সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ফাঁসি কার্যকর – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, দুপুর ১২:৪১, ১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ফাঁসি কার্যকর

newsup
প্রকাশিত নভেম্বর ৯, ২০২১
সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ফাঁসি কার্যকর

Manual8 Ad Code

নিউজ ডেস্কঃ খুনের মামলায় চুয়াডাঙ্গার মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকরে আইনের কোন ব্যতয় হয়নি বলে জানিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সকল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ শেষেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই আসামির জেল আপিলের সঙ্গে নিয়মিত আপিল শুনানি না হওয়ার পেছনে তাদের আইনজীবীর দায় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছে, হাইকোর্টের ফাঁসি বহালের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল করার পরও বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে আনেননি আইনজীবী। একজন জুনিয়র আইনজীবী, যিনি আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনায় তালিকাভুক্ত নন তিনি কীভাবে এ ধরনের ফাঁসির মামলা নেন। জেল আপিল খারিজের পর ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে কিন্তু ওই আইনজীবী চার বছরেও বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত নন। একজন আইনজীবী এতটা উদাসীন হলে কিভাবে চলবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ গতকাল সোমবার এই মন্তব্য করেন।

একইসঙ্গে এ ধরনের ইস্যুতে সঠিক তথ্য না জেনে মিডিয়ায় মন্তব্যকারীদের সম্পর্কে আপিল বিভাগ বলেছে, কোর্টকে আক্রমণ করা খুবই খারাপ নজির। প্রয়োজনে তো সবাই কোর্টে আসে। সবাই রিলিফ (প্রতিকার) নেয়, সবাই রিলিফ পায়। কোর্টের কোনো সামান্যতম ত্রুটি হলেই পুরো বিষয় না জেনে এরকম করে আক্রমণ করা, এটা তো খুবই দুঃখজনক।

Manual6 Ad Code

প্রসঙ্গত মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইসব প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে। কিন্তু আপিল বিভাগ বলেছে, নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর তাদের ফাঁসি বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাদের জেল আপিল গুণাগুনের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করে খারিজ করেছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ।

Manual7 Ad Code

শুনানিতে তাদের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী বক্তব্য পেশ করেছেন। এরপর আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। সেই প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজের পর দুই পরিবারের ১৪ জন সদস্য কারাগারে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এরপরই ফাঁসি কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এখানে কারা কর্তৃপক্ষের দোষ কোথায়। সকল ধরনের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে আসামিদের ক্ষেত্রে।

Manual1 Ad Code

এ পর্যায়ে আসামিদের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, হুমায়ুন কবির নামে একজন আইনজীবী আমাকে মামলাটা দিয়েছেন। মক্কেলের খোঁজ নিতে বলি। পরে সে আমাকে জানায় তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আপিল বিভাগ একটা গাইডলাইন দিতে পারে, যাতে কারা কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকেন। দুই আসামির পরিবারও কিছু ক্ষতিপূরণ পায়।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, জেল কর্তৃপক্ষের দোষটা কোথায়? সকল প্রক্রিয়া তো অনুসরণ হয়েছে।  আইনজীবী বলেন, আইনগত কোনো ভুল নাই।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ বলেন, তাহলে জেল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন কেন? যেহেতু মামলা কার্যতালিকায় এসে শুনানি হয়েছে আপনাদের উচিত ছিলো তাতে অংশ নেওয়া। জেল আপিলের সঙ্গে নিয়মিত আপিল যুক্ত করে দিতে পারতেন। আপনারা দোষটা স্বীকার করেন না কেন?

আইনজীবী বলেন, মক্কেল মূর্খ এবং গরীব মানুষ। আইনজীবীকে জানায়নি জেল আপিল হয়েছে।

আদালত বলেন, এটা তো কোনো ব্যাখ্যা নয়। জেল আপিল হয়েছে, শুনানি হয়েছে। ডিএলআরএ এই মামলা রিপোর্টেড কেস হিসাবে স্থান পেয়েছে। আপনারা কিছুই খোঁজ রাখেননি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত না হয়েও যখন অন্য একজনকে দিয়ে মামলা দাখিল করেছেন তখন তিনি যদি আপিলের পদ্ধতি না জানেন সেটা তো মহামুশকিলের বিষয়। আর সংশ্লিষ্ট শাখা তো জেল আপিলের সঙ্গে নিয়মিত আপিল ট্যাগ করে না। আমাদের সিস্টেম তো ডিজিটাল নয়। বরং আপিলকারী আইনজীবী এসে বলেন যে-এই আপিলের সঙ্গে ওই আপিল ট্যাগ করেন।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এই বেঞ্চের আমরা সবাই আইনজীবী থেকে বিচারপতির আসনে বসেছি। পত্র-পত্রিকায় যেভাবে নিউজটা আসলো আপনাদের (আইনজীবীদের) এগিয়ে আসা উচিত ছিল। এগিয়ে এসে বলা উচিত ছিল ঘটনাটা এরকম। আমরাও অ্যাডভোকেট ছিলাম। আজকে আপনি বলছেন জেলখানা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা, তাদের সতর্ক করা। তারা যথেষ্ট সতর্ক থাকে, তারা কিন্তু বিষয়গুলোকে ফলো করে এবং তাদের রেকর্ড ঠিক থাকে। দেখেছি, রেকর্ডে খুব একটা ভুল হয় না। অ্যাডভোকেটদের ভুলের কারণে অনেক সময় এ রকমটা হয়। আমরা (বিচারপতিরা) কোর্টে বসে থাকি, অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডরা আসেন না। বারবার বলার পরেও আসেন না।

Manual2 Ad Code

বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বলেন, যে আইনজীবী ভুল করেছেন তাকে বলুন ক্ষতিপূরণ দিতে।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, জেল আপিল খারিজের রায়টি সমন্বিত রায়। সেখানে মামলার সবকিছুই আলোচনা করা হয়েছে। রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য দেওয়া হয় নাই।

বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, এই খবর নিয়ে কোর্টকে কত সমালোচনা করেছে। সমালোচনাকারীরা কি প্রকৃত তথ্য জানেন? টকশোতে কত কথা বলা হয়েছে। অ্যাডভোকেট শিশির মনির কি আপিল বিভাগে তালিকাভূক্ত? সে যেভাবে মন্তব্য করেছে তাতে সবাই দোষী। উনি কিছু না দেখে কেন এরকম মন্তব্য করলেন? আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে আমরা কেউ প্রিজাডিং অফিসার, কেউ কোর্ট অফিসার। এরকমভাবে কোর্টকে আক্রমণ করা, এটা তো খুব খারাপ নজির। আমরা তো কোনো অ্যাডভোকেটকে এরকমভাবে অ্যাটাক করি না, শাস্তি দেই না। আমরা তো চেষ্টা করি কোনো একটা ভুল হলে তা শুধরে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য রেখেছে আপিল বিভাগ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code