সংগ্রাম দত্ত
প্রকৃতির অফুরন্ত সৌন্দর্যে মোড়া শ্রীমঙ্গলকে বলা হয় বাংলাদেশের ‘চায়ের রাজধানী’। সবুজ চা–বাগান, পাহাড়ঘেরা অরণ্য, লেক আর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির অনন্য সমন্বয় এই শহরকে আলাদা পরিচয় দিয়েছে। সারা বছর দেশি–বিদেশি পর্যটকে মুখর থাকে এ অঞ্চল।
এ বছর ২৭ সেপ্টেম্বর, শনিবার, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে শ্রীমঙ্গল যেন উৎসবে ভরে উঠল। সকালে শহরের রাধানগরের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের ফটক থেকে শুরু হয় এক বর্ণাঢ্য র্যালি। হাতে ব্যানার–ফেস্টুন, রঙিন পোশাকে অংশগ্রহণকারীদের উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে ওঠে শহরের প্রধান সড়কগুলো। পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে র্যালিটি যেন রূপ নেয় আনন্দ–উৎসবে।
বৈচিত্র্যের মিলনমেলা
শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্যের বড় অংশ জুড়ে আছে এখানকার মানুষ ও তাদের সংস্কৃতি। এখানে বসবাস করে মণিপুরি, খাসিয়া, ত্রিপুরা সহ অসংখ্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তাদের নিজস্ব ভাষা, পোশাক, আচার–অনুষ্ঠান ও খাবার শ্রীমঙ্গলের সামাজিক রঙে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। পাশাপাশি চা–বাগানের শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীও এই এলাকার সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত।
প্রধান শিল্পাঞ্চল হিসেবেও শ্রীমঙ্গলের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের চা উৎপাদনের প্রধান অংশ আসে এখান থেকে। অথচ শিল্পনগরীর ব্যস্ততার মাঝেও এখানকার প্রকৃতি ও সংস্কৃতি মিলে এক অনন্য সমন্বয় গড়ে তুলেছে।
পর্যটনে বৈচিত্র্যের আকর্ষণ
চা–বাগানের সরু আঁকাবাঁকা পথ ধরে হাঁটলেই দেখা মেলে সবুজের অবারিত সমারোহ। আবার মণিপুরি পল্লীতে ঢুকলেই শোনা যায় রাবান বাজিয়ে তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের তাল। খাসিয়াদের পাহাড়ি টিলায় গড়ে ওঠা জীবনের দৃশ্য যেমন অনন্য, তেমনি ত্রিপুরাদের লোকগান শোনার অভিজ্ঞতাও ভিন্ন স্বাদ দেয়। এ বৈচিত্র্যই শ্রীমঙ্গলকে পর্যটনের জন্য অনন্য করে তুলেছে।
উৎসবের বার্তা
বিশ্ব পর্যটন দিবসে আয়োজিত র্যালি শুধু আনন্দের আয়োজন নয়, বরং এটি শ্রীমঙ্গলের বহুমাত্রিক পরিচয়কে তুলে ধরারও একটি উপলক্ষ। স্থানীয়রা মনে করেন, যদি পরিকল্পিতভাবে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগানো যায়, তবে শ্রীমঙ্গল শুধু ‘চায়ের রাজধানী’ নয়, বরং বৈশ্বিক পর্যটনের এক উজ্জ্বল গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।