বৈদেশ যাত্রার রম্যকথন – BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সন্ধ্যা ৬:৫২, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


 

বৈদেশ যাত্রার রম্যকথন

banglanewsus.com
প্রকাশিত অক্টোবর ৪, ২০২২
বৈদেশ যাত্রার রম্যকথন

Manual6 Ad Code

সৈয়দ শওকত আলী ::: ইমিগ্রেশন পার হোয়ে বিমান বাংলাদেশের ওয়েইটিং লাউঞ্জে বোসতে যাচ্ছিলাম। দেখি সবার সামনে হুইল চেয়ারে বোসে বোসে এক চাচ্চু চিৎকার করছে- বিমানে নয়া যাইরাম নি। ইতা স্টাফ হকলর জন্মের আগে তাকি যাইরাম। কারে কেমনে রেসপেট করা লাগে জানে না। আমি মুক্তিযুদ্দা রে বেটাইন।
আমি একদম পিছনে বসতে চলে গেলাম যাতে এসব ভগচগ শুনতে না হয়। তারপরও পুরা ওয়েইটিং টাইম তার উচ্চকণ্ঠের চিল্লাফাল্লা শুনে সবার পার করতে হোল।
আমার সিট জানালার পাশে। উপরে হ্যান্ড লাগেজ রাখছিলাম, হঠাৎ বিমান বালার সুললিত কণ্ঠ- স্যর হ্যান্ড লাগেজ নিয়েই দ্রুত বসে পড়ুন স্যর। একজন সিরিয়াস অসুস্থ হুইলচেয়ারে আগত যাত্রী আপনার পাশে বসবেন। আপনি দ্রুত বসে উনাকে বসার সুযোগ করে দিন। তারপর আমি আপনার লাগেজ উপরে রাখব।
আমি লাগেজ নিয়েই দ্রুত বসে পরলাম। দেখি আমার সহযাত্রী সেই চিল্লাফাল্লারত চাচ্চু, যিনি কিনা এক্ষণে চোখ ঠাটিয়ে কটমট কোরে আমাপানে তাকিয়ে আছে। আমি ঠিক বুঝে পাই নে আমার অপরাধ কী। আমার ১ম বৈদেশ যাত্রার মজা বুঝি মাটি হোয়ে গেল।
আশার আলো দেখা দিল যখন চাচ্চু সিটে বোসেই নাক ডাকতে শুরু করল। কিন্তু বিধি বাম, সুখনিদ্রার জন্য উনি আমার কাঁধকেই বালিশ হিসেবে বেছে নিল, যদিও ওপাশে উনার বৌ ছিল। আমি বোলতে চাচ্ছিলাম- চাচ্চু চাচীর কাঁধে ঘুমান, সাহস করতে না পেরে চট কোরে সামনে সরে গেলাম, চাচ্চু মাঝের হাতলে ধুরুম কোরে পতিত হোল। এভাবে ৫ বার চাচ্চুকে হাতলে পতিত করার পর চাচ্চুর সুখনিদ্রা উবে গেল।
চাচ্চুর মুখে মাস্ক ছিল না। তবে চাচ্চু অনবরত কাশছিল এবং টিস্যুতে সযতনে কাশ সর্দি ভরে ভরে সামনের সিটের ব্যাকে ভরছিল। এক পর্যায়ে চাচ্চু সিট থেকে উঠে পরল। ২ ঘণ্টার ভিতর অন্তত ৫ বার হনহন কোরে বিমানের ভিতর টহল দিল। আমি অনেক ভেবেও ঠাহর করতে পারলাম না এত তাগড়া টগবগে চাচ্চুর হুইল চেয়ারে আগমনের কারণ কী।
তবে বাংলাদেশ বিমানের সেবায় সত্যিই মুগ্ধ হোয়ে ভাবছিলাম কেন এর এত দুর্নাম, ঠিক তখনই চাচ্চু চিৎকার করলেন- হালার বাংলাদেশ বিমান ভালা নায়! ওই বিমানবালা ওবায় আয়! অত গরম লাগে কেনে? এসি ছাড়স না!
বিমানবালা সবিনয়ে জানান- স্যর এসি তো ছাড়া আছে।
চাচ্চু একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে- তে অত গরম কী?
অতঃপর চাচ্চু মাথার উপরে রিডিং লাইটগুলোকে এসির ছিদ্র ভেবে সেগুলো থেকে বাতাস বের করতে কিল ঘুষি মারতে থাকেন। তাতে কাজ না হওয়ায় অস্থির হোয়ে সামনের টিভি স্ক্রিনে মাথা দিয়ে ঢুস দিতে থাকেন, ঠিক যেভাবে বিশ্বকাপ ফাইনালে জিদান মাতেরাজ্জির বুকে ঢুস দিয়েছিল।
আমি দেখলাম উনার টিভি স্ক্রিনের সব অপশন চলে গিয়ে লেখা উঠেছে- channel not available.
অপশন ফিরিয়ে আনতে চাচ্চু এবারে স্ক্রিনে থাবড় মারা শুরু করেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় আর গরমের অস্থিরতায় চাচ্চু এবারে শার্ট খুলে ফেলেন। স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত চাচ্চু সিটে গা এলিয়ে আয়েশে বাহু উত্তোলন করে একবার এই বগল আরেকবার ওই বগল চুলকাতে থাকেন। এতক্ষণে যেন চাচ্চুটি ১০০% তৃপ্তি লাভ করেন।
আমি ১২ ঘণ্টা এই বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান উপভোগ করি। প্লেইন ম্যানচেস্টারে নামলে চাচ্চুর সমস্ত নড়াচড়া চিল্লাফাল্লা আবার বন্ধ হোয়ে যায়। চাচ্চু স্তব্ধ। নিজের অসুস্থতা দুর্বলতার দোহাই দিয়ে জানান, হুইল চেয়ার ব্যতীত উনি সিট হতে গাত্রোত্থান করতে নিতান্ত অপারগ। আমি আর বের হতে পারি নে। চাচ্চুর ফাঁদে আটকা পড়ে যাই এবং সবার শেষে প্লেইন থেকে নামতে হয়।
ইমিগ্রেশনে লাইনে সবার পিছনে দাঁড়িয়ে দেখি চাচ্চু বিজয়ের হাসি দিতে দিতে অসুস্থ অথর্ব কোটায়, হুইল চেয়ারে চড়ে, শত শত যাত্রীকে পিছনে ফেলে বের হোয়ে গেলেন।
তখন আমার কাছে পরিস্কার হয় চাচ্চুর হুইল চেয়ার রহস্য। যদিও ততক্ষণে অনেক দেরি হোয়ে গেছে। তবে আমার ১ম বৈদেশ ভ্রমণ চিরস্মরণীয় করার কৃতিত্ব চাচ্চুকে দিতে হয় বৈকী।

Manual3 Ad Code

লেখক : কলামষিট ও চিকিতসক

Manual1 Ad Code

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code