গণমানুষের কবি দিলওয়ার : ৮ম প্রয়াণ দিবসে - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ৪:৫২, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

গণমানুষের কবি দিলওয়ার : ৮ম প্রয়াণ দিবসে

banglanewsus.com
প্রকাশিত অক্টোবর ১০, ২০২১
গণমানুষের কবি দিলওয়ার : ৮ম প্রয়াণ দিবসে

শাহাদত বখ্ত শাহেদ::

গণমানুষের কবি মানে দিলওয়ার। তার পারিবারিক নাম দিলওয়ার খান। ডাক নাম দিলু। কলম নাম দিলওয়ার। আমরা সকলে তাকে জানি গণমানুষের কবি হিসেবে।

তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা “সাইফুল্লাহ হে নজরুল ” এটি ১৯৪৮ সালে সিলেটের সাপ্তাহিক “যুগভেরী” তে প্রকাশিত হয়।

জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৩৭ খ্রীস্টাব্দে, সিলেট শহরের দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা,খান মনজিলে।পিতা মোহাম্মদ হাসান খান,মাতা মোসাম্মৎ রহিমুন্নেছা।

ঝালোপাড়া প্রাথমিক পাঠশালা থেকে তার স্কুল জীবন শুরু। তারপর রাজা জিসি হাই স্কুল থেকে মেট্টিকুলেশন ১৯৫২, ১৯৫৪ সালে আই এ পাশ করেন এম সি কলেজ, সিলেট থেকে। তারপর শারিরীক অসুস্হতার কারনে একাডেমিক শিক্ষার ইতি টানেন।

তিনি প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন দক্ষিণ সুরমা হাই স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে। দুইমাস কাজ করার পর তিনি ইতি টানেন শিক্ষকতা পেশার। তার পর শুরু করেন সাংবাদিকতা। এই সব পেশার পাশাপাশি তার সাহিত্য চর্চা অব্যাহত রাখেন। দুই হাতে লিখতে থাকেন কবিতা, ছড়া প্রবন্ধ, ফিচার।

তিনি ১৯৬৯ সালে দৈনিক গণকন্ঠে সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।১৯৭৪ সালে রুশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ঢাকায় সিনিয়র ট্রান্সলেটর হিসেবে মাসিক উদয়ন পত্রিকায় কাজ করেন। তার সম্পাদিত লিটল ম্যাগ ও পত্রিকা উল্লাস,মৌমাছি, গ্রাম সুরমার ছড়া, মরুদ্যান, সময়ের ডাক, সিলেট পরিদর্শক ইত্যাদি। তিনি সার্বক্ষণিক লেখালেখির পাশাপাশি ফ্রী লেন্স সাংবাদিকতার কাজ করেন।

১৯৬০ সালে উর্দুভাষী আনিসার সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। তার সন্তানাদির মধ্যে তিন ছেলে চার মেয়ে।তিন ছেলেই বাবার উত্তরাধিকারি সূত্রে কবি হয়ে উঠেন।
বড় ছেলে শাহিন ইবনে দিলওয়ার, মেঝো ছেলে কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার এবং কামরান ইবনে দিলওয়ার। বোন নাহিদ বিনতে দিলওয়ার,রেজিনা বিনতে দিলওয়ার,সাজিয়া বিনতে দিলওয়ার, নৌশবা বিনতে দিলওয়ার,প্রয়াত।

হঠাৎ করে একদিন তার স্রী আনিসা ইহজগতে ছেড়ে চলে গেলে। তিনি আনিসার ছোট বোন ওয়ারিশা খাতুন কে বিয়ে করেন। তার সন্তানাদির মধ্যে দুই ছেলে আলী ইমরান ইবনে দিলওয়ার ও রিদওয়ান ইবনে দিলওয়ার। তারা দু’জনই প্রবাসী।

দিলওয়ারের উল্লেখযোগ্য কবিতার বই জিজ্ঞাসা, উদ্ভিন্ন উল্লাস,স্বনিষ্ঠ সনেট,ফেসিং দা মিউজিক। রক্তে আমার অনাদি অস্হি, বাংলা তোমার আমার (গানের বই), দুই মেরু দুই ডানা, দিলওয়ারের শত ছড়া,দিলওয়ার রচনা সমগ্র ১ম ও ২য় খন্ড উল্লেখযোগ্য। দিলওয়ার ভারত ও ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন এবং শুভানুধ্যায়িদের দ্বারা সংবর্ধিত হোম।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে কলম যোদ্ধা হিসাবে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি তখন সমস্বর লেখক শিল্পী গোষ্টীর পক্ষ থেকে সিলেট রেজিস্টারি মাঠে “দুর্জয় বাংলা” নামে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের আয়োজন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার রচিত একাধিক গনসংগীত প্রচারিত হয়। যে গান গুলো যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যোগায়।

১৯৬৫ সালে তার বিখ্যাত গান “তুমি রহমতের নদীয়া দোয়া করো মোরে হযরত শাহজালাল আউলিয়া” এই গান দিয়ে সিলেট বেতারের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ গ্রামোফোন কোম্পানির প্রযোজনায় দিলওয়ার রচিত চারটি গান দিয়ে একটি রেকর্ড বের হয়। যে গানে কন্ঠ দেন সিলেটের বিশিষ্ট কন্ঠ শিল্পী আরতি ধর।

দিলওয়ার তার সাহিত্যে সাধনায় স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও পরে ফেলোশিপ পান। দিলওয়ার ২০০৮ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক অর্জন করেন। তা ছাড়া দেশ বিদেশে বহু সম্মাননায় তিনি ভূষিত হোন।

কবির বিখ্যাত কবিতা “রক্তে আমার অনাদি অস্হি” জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বাংলাদেশ কর্তৃক “সাহিত্য পাঠ” (গদ্য ও কবিতা) একাদশ -দ্বাদশ ও আলিম শ্রেণির বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়।

কবির উপর গবেষণাধর্মী ও সম্পাদিত গ্রন্হ ও ডকুমেন্টারির মধ্যে ড.সেলু বাসিতের “দিলওয়ারঃঅব্যাহত কবিতার ধারায়”,আনোয়ার আহমদের “একজন কবি দিলওয়ার,শামসুল করিম কয়েসের “জীবন শিল্পী দিলওয়ার”,সুপ্রিয় ব্যানাজ্জির “গণমানুষের কবি”।

শাহাদত বখ্ত শাহেদ সম্পাদিত “ছড়ালোক” দিলওয়ার সংখ্যা , পুলিন রায় সম্পাদিত “ভাস্কর” দিলওয়ার সংখ্যা, শাহাদত বখ্ত শাহেদের “জিজ্ঞাসা”(ডকুমেন্টারি) ইত্যাদি।

কবি মৃত্যুর আগ মূহুর্তে শেষ সম্মাননাটি পান “ছড়ালোক” ছড়ার ছোটোকাগজ কর্তৃক “ছড়ালোক’ আজীবন সম্মাননা। এই অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশিষ্ট কবি জয়দুল হোসেন, গবেষক মানবদ্ধন পাল, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব আলী আকবর মজুমদার,কবি মিলি চৌধুরী গবেষক স্বপন সহ সিলেটের কবি সাহিত্যিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্মাননা ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট কবির বাস ভবনে এসে প্রদান করা হয়।

দিলওয়ার ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর দুপুরে লেখালেখি অবস্হায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইহ জগত ত্যাগ করেন।


লেখক: ছড়াকার, ছড়া সংগঠক, সম্পাদক- ছড়ালোক

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।